বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। নানা কাজে প্রতিনিয়তই আমরা নানা ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানব ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের কী ধরনের মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে এবং কী কী নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হবে। সেই সাথে আমরা বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোর উপর কীভাবে প্রভাব পড়েছে তাও পর্যালোচনা করব। সবশেষে আমরা বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধারা তুলে ধরার জন্য একটি সেমিনারের আয়োজন করব এবং সেখানে নিজেদের কাজ মাল্টিমিডিয়ায় উপস্থাপন করব।
আমরা সবাই কম-বেশি ডজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে জানি। অনেকেই হয়তো দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে জেনে বা না-জেনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারও করেছি। এই সেশনে শুরুতেই আমরা আমাদের জীবনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করব। এরপর ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে কয়েকটি গল্প পড়ে সেটি নির্ণয় করব। এই অভিজ্ঞতার শেষ সেশনে আমরা একটি সেমিনারের আয়োজন করব, যেখানে আমরা দলগতভাবে কয়েকটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন করব। প্রথম সেশন থেকেই তাই আমরা সেই সেশনের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করা শুরু করব। প্রথমেই এসো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের যে ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে আমরা জানি সেগুলো নিয়ে জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ছকটি পূরণ করি-
ছক ৬.১:
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র | যেভাবে ব্যবহার করছি |
১। যোগাযোগের ক্ষেত্রে | |
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে |
|
২। শিক্ষা ক্ষেত্রে |
|
৩। কৃষিক্ষেত্রে |
|
৪। বিনোদনের ক্ষেত্রে |
|
৫। |
|
৬। |
|
৭। |
|
৮। |
|
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের এবং আমাদের আশপাশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার কিন্তু আর দৈনন্দিন জীবনের অল্পকিছু কাজের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব লক্ষনীয়। এখন আমরা নিচের গল্পগুলো পড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেত্রগুলোতে কীভাবে পরিবর্তন আসছে তা বোঝার চেষ্টা করব-
গল্প ১:
গতকাল আঁখির মা একটি হাসপাতালের ওয়েবসাইটে ঢুকে একজন চোখের ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেন। এরপর থেকে তার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তিনি যেই ওয়েবসাইটেই ভিজিট করছেন সেগুলোর সবখানেই তাকে শুধু বিভিন্ন হাসপাতাল আর ডাক্তারের বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। |
গল্প ২:
শাওন সবসময় নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী। বিভিন্ন বিদেশি ভাষা, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি শেখার জন্য সে বিভিন্ন বই কিনে সেগুলো পড়ে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ট কোর্স করে। তবে আজকাল আর বই না কিনে বা সরাসরি কোর্সে ভর্তি না হয়ে সে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আর অনলাইন কোর্স করে নতুন নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে ফেলছে। |
গল্প ৩:
নিশাতের বাবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে তার বন্ধুর কাছে কিছু টাকা পাঠাবেন। তিনি তাই নিশাতকে বললেন তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা তুলে এনে বন্ধুর ব্যাংক একাউন্টে টাকাটা জমা করে দিতে। কিন্তু নিশাত ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই তার বাবার মোবাইলে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে কয়েকটা ক্লিকেই টাকাটা পাঠিয়ে দিলো। |
গল্প ৪:
রিফাত গত মাসে একটি নতুন স্মার্ট ফ্রিজ কিনেছে। আজ সে বাজার করতে গিয়ে যখন মনে করতে পারছিল না যে বাসায় ফ্রিজে কী কী সবজি আছে তখন সে তার স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে দেখে নিলো ফ্রিজে কি কি আছে। সে দেখল যে ফ্রিজে মাত্র একটি ডিম রয়েছে। তখন সে বাজার থেকে ডিমসহ তার ফ্রিজে আর যা যা নেই সেগুলো কিনে আনলো |
গল্প ৫:
বকুল একজন কৃষক। এ বছর তার খেতে ফলন অনেক কম হয়েছে। তিনি বুঝতে পারছেন তিনি ক্ষেতে যে সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করেছেন সেগুলোর কোনো সমস্যার কারণেই এমন হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক কোথায় তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই তিনি তার ক্ষেতের কয়েকটি ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলেন। |
উপরের গল্পগুলো থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা কি আমরা বুঝতে পারছি? এসো জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ছক ৬.২ এ সেই পরিবর্তনগুলো লিখে ফেলি-
ছক ৬.২
গল্প | পরিবর্তনের ধরন |
গল্প ১
|
|
গল্প ২
|
|
গল্প ৩
|
|
গল্প ৪
|
|
গল্প ৫
|
|
আগামী সেশনের প্রস্তুতি:
আমাদের জীবনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রভাব কী তা চিন্তা করব এবং সম্ভব হলে বাড়ির কোনো সদস্যের সাথে বা বন্ধুদের কারো সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করব।
গত সেশনে আমরা বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে জেনেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তাও আলোচনা করেছি। এখন এসো বন্ধুদের সাথে মিলে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে আলোচনা করি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে। এক্ষেত্রে আমরা দুই ধরনের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি-ইতিবাচক প্রভাব এবং নেতিবাচক প্রভাব।
এসো তাহলে আলোচনা করে নিচের ঘরগুলো পূরণ করি-
বন্ধুর সামনে উপস্থাপন করবো এবং সব দলের আলোচনা থেকে পাওয়া সকল ইতিবাচক প্রভাব এবং সকল নেতিবাচক প্রভাবের দুটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে এমন কোথাও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবো যাতে পরবর্তী সেশনে আমরা এই তালিকাগুলো দেখে কাজ করতে পারি।
আগামী সেশনের প্রস্তুতি:
এই সেশনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের যে সকল নেতিবাচক প্রভাব আমাদের আলোচনায় এসেছে সেগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য বা সে সকল নেতিবাচক প্রভাব রোধের জন্য আমরা কী করতে পারি তা ভেবে দেখবো।
গত সেশনে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জেনেছি। এই সেশনে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব রোধে আমাদের করণীয় কী হতে পারে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করব। সেইসাথে কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনটি নৈতিক আচরণ এবং কোনটি নয় তাও জানব। মনে আছে নিশ্চয়ই, আমাদের কিন্তু একটি সেমিনারে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন করতে হবে, আর তারই প্রস্তুতি হিসেবে আমরা বিগত সেশনগুলোতে কাজ করে আসছি। এই সেশনের কাজগুলোও আমাদের প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
তাহলে এসো গত সেশনে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির যেসব নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা করে নির্ণয় করেছিলাম সেগুলো থেকে ২টি চিহ্নিত করি। এবার দলগতভাবে আলোচনা করে সেই প্রভাবগুলো রোধের উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করে নিচের ছকে লিপিবদ্ধ করি-
ছক ৬.৩
ডিজিটাল প্রযুক্তির যে দুটি নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আমরা আলোচনা করব | নেতিবাচক প্রভাব দুটি থেকে প্রতিকারের উপায়/ প্রভাব রোধে আমাদের করণীয় |
১।
|
|
২।
|
লক্ষ করি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রেখে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার গুরুত্ব কিন্তু অনেক। আমরা এবার কয়েকটি গল্প পড়ব এবং গল্পগুলো থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি বিশ্লেষণ করব। এসো গল্পগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি।
ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা দিপুদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফটোগ্রাফি ক্লাব থেকে একটি ফটোগ্রাফি (আলোকচিত্র) প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং প্রায় শতাধিক আলোকচিত্রের মধ্য থেকে একটি আলোকচিত্রকে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু বিজয়ী ঘোষণার পর সেই আলোকচিত্রটির চিত্রকর পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করে। সে জানায় যে তাঁর পাঠানো ছবিটি আসলে কোনো আলোকচিত্র নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় কিছু কমান্ড লিখে তৈরি করা একটি ছবি। |
ওয়েবসাইট হ্যাকিং Eidal872 নামের একজন হ্যাকার একদিন মজার ছলে একটি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে। সেখানে সেই দেশটির নাগরিকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল যেগুলো ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করা সম্ভব। Eidal872 সেই তথ্যগুলোর কোনো অপব্যবহার না করে বরং মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি জানায়। পরবর্তীকালে Eidal872 এর সহায়তায় দেশটি তাদের সকল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। একাডেমিক কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে "আমাদের জীবনে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব" বিষয়ক একটি প্রতিবেদন লিখতে বলা হল। শিক্ষার্থীরা সবাই তাদের নিজেদের জীবনের নানা ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি লিখল। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী প্রতিবেদনটি লেখার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (চ্যাট জিপিটি, গুগল বার্ড, বিং চ্যাট ইত্যাদি) ব্যবহার করলো। |
গল্পগুলো পড়ে আমরা কী বুঝলাম? এসো বিশ্লেষণ করি যে এই দুটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রেখে কাজ করা হয়েছে কি না। জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ঘরে আমাদের বিশ্লেষণগুলো লেখি-
পরবর্তী সেশনের প্রস্তুতি:
আজকের সেশনের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকা উচিত সেগুলো পরিবারের সদস্যদের সাথে অথবা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নির্ণয়ের চেষ্টা করব।
গত সেশনে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব রোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জেনেছি। সেই সাথে আরও জেনেছি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কী ধরনের নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, এই অভিজ্ঞতায় আমাদের শেষ কাজটি হবে সেমিনারে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন করা। এই সেশন থেকেই আমরা আমাদের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু করব। তবে সেশনের শুরুতেই আমরা জানব ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ কীভাবে করা যায়।
মনে করে দেখি, ৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জেনেছি। এখন এসো সেই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে অর্জিত জ্ঞানের আলোকে নিচের বক্তব্যগুলোর সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করতে পারি কিনা তা যাচাই করে দেখি-
ছক ৬.৫
বক্তব্য | সত্য / মিথ্যা |
১। কপিরাইটে রেজিস্ট্রেশন করা আছে এমন ছবি স্বত্বাধিকারী অনুমতি ছাড়াই ইন্টারনেট থেকে নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
| |
২। প্রয়োজনীয় কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে এর লাইসেন্স কিনে তারপর ব্যবহার করা উচিত।
| |
৩। অনুমতি ছাড়া কারো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা উচিত নয়। | |
৪। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ কিছু শেয়ার করলে তা যদি আমার পছন্দ না হয় তাহলে সেখানে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করা উচিত।
| |
৫। ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো তথ্য দেখলে প্রথমে তার উৎস যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তারপর তা শেয়ার করা উচিত।
| |
৬। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আমার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের পিন কোড কারো সাথে শেয়ার করা উচিত নয়।
| |
৭। নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য কারো নাম এবং ছবি ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত।
| |
৮। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কাউকে কোনো বাজে মন্তব্য করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
|
তাহলে দেখতে পাচ্ছি যে, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে কীভাবে দ্বায়িত্বশীল আচরণ করতে হয় সে সম্পর্কে আমরা আগের অভিজ্ঞতাগুলো থেকেই অনেক কিছু জেনেছি। এবার এসো নিচের গল্পগুলো পড়ে আরও কয়েকটি বিষয় জেনে নিই।
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ১ বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী বিদেশে একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়তে যায়। সেখানে যাওয়ার এক মাস পর সে হঠাৎ একদিন জানতে পারল তার বৃত্তিসহ ভর্তি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এমনটা কেন হলো তা জানতে চাইলে তাকে বলা হলো যে তার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টে নেতিবাচক রিপোর্ট আসায় বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ভর্তি বাতিল করেছে। ৩ বছর আগে সে জঙ্গিবাদের সমর্থনে লেখা একটি অনলাইন প্রতিবেদনে না বুঝে একটি সমর্থনমূলক মন্তব্য করেছিল। তার সেই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আসায় তারা তার বৃত্তি এবং ভর্তি বাতিল করে দিয়েছে।
২ বাংলাদেশি একজন নাগরিক গতমাসে একটি বড়ো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরি পেয়েছে। সেই সুবাদে সে তার প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের জন্য একটি বেশ বড়ো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সবাইকে অনেক আপ্যায়ন করে। কিন্তু কিছুদিন পর জানা যায় যে তার চাকরিটি চলে গিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে তার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টে নেতিবাচক রিপোর্ট পাওয়া যাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। দুদিন আগে সে তার একজন সহকর্মীর শেয়ার করা পোস্টে অসম্মানসূচক মন্তব্য করায় প্রতিষ্ঠান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
|
গল্পগুলো পড়ে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব দায়িত্বশীল আচরণ সম্পর্কে শিখলাম তা নিচের ছকে লিখে ফেলি-
ছক ৬.৬
১। ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো তথ্য শেয়ার করা বা কোথাও কোনো মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্কতা বজায় রাখব।
|
২।
|
৩।
|
8।
|
৫।
|
আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে আমাদের এই অভিজ্ঞতার শেষ কাজটি হলো দলগতভাবে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন তৈরি করে তা একটি সেমিনারে উপস্থাপন করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা যে প্রেজেন্টেশন তৈরি করব তার বিষয়বস্তু কী হবে? আজকের সেশনে আমাদেরকে শিক্ষক সেই বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। এবং সেই সাথে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের আশপাশে যে ধরনের পরিবর্তন আসছে তার সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেব তাও জানব।
প্রথমেই এসো আমাদের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের ব্যাপারে জেনে নিই। প্রেজেন্টেশনের জন্য আমাদেরকে শিক্ষক দলে ভাগ করে দিবেন। বা আমাদের হয়তো আগে থেকেই অন্যান্য অভিজ্ঞতায় কাজ করার সময় থেকে কয়েকটি দল তৈরি করাই আছে। তাহলে আমরা সেই দলেও কাজ করতে পারি। আমাদের প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু হবে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ (গ্লোবাল সাউথ)-এর দেশগুলোর মধ্যে থেকে ২টি করে দেশ এবং সেই দু'টি দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব। কোন দল কোন দুটি দেশ নিয়ে কাজ করবে তা শিক্ষক নির্ধারণ করে দিবেন।
বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথ
এদের মধ্যে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ। সাধারণভাবে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে থাকা বেশিভাগ দেশ এই তালিকাভুক্ত হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে এই তালিকাটি তৈরি নয়। এই দেশগুলোর মাঝে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু মিল পাওয়া যায় বলেই এই দেশগুলোকে একটি বৃহত্তর নামের আওতায় আনা হয়েছে। |
তাহলে আমরা আমাদের প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেনে গিয়েছি। এবার এসো কয়েকটি উদাহরণ দেখে জেনে নিই যে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবের সাথে খাপ খাওয়াতে এসব দেশে কী কী কাজ করা হয়েছে বা হচ্ছে।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া তাদের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে যাতে তাদের দেশের সর্বাধিক রপ্তানিকৃত পণ্য কফি এখন আরও দ্রুত এবং সহজে বিশ্বব্যাপী আরও বৃহৎ পরিসরে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারে।
|
পূর্ব আফ্রিকার আরেকটি দেশ রুয়ান্ডা তাদের জনগণকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে এবং পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে একটি বৃহৎ ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে যার আওতায় তাদের প্রায় ৫০ লক্ষ নাগরিক ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করেছে।
|
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে প্রগতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল প্রতিনিয়ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত ৮-১০ বছরে ব্রাজিলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাকারী দলের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল কেন্দ্রের সংখ্যা।
|
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া তার নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট খরচ কমিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করেছে।
|
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত ডিজিটাল প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলাতে তাদের 'আধার কার্ড' (বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড) কে উন্নত করেছে। ভারতের ইলেক্ট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বর্তমানে সকল আধার কার্ডের অধিকারী একটি করে ক্লাউড অ্যাকাউন্টের এক্সেস পাচ্ছে, যা ব্যবহার করে তারা তাদের প্রয়োজনীয় আসল ডকুমেন্ট এবং সার্টিফিকেট (যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের কাগজ, একাডেমিক মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট ইত্যাদি) সরাসরি ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইনে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারছে।
|
তাহলে আমরা কিন্তু বেশ কিছু নতুন বিষয় জানলাম, তাই না? আমাদের মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনটি তৈরির জন্য তথ্য অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা এমন আরও অনেক উদাহরণ খুঁজে পাব। কিন্তু তাঁর আগে এখন চলো উপরের উদাহরণগুলো অনুসারে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে আমরা কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তার একটি তালিকা তৈরি করি-
ছক ৬.৭
১।
|
২।
|
৩।
|
8।
|
৫।
|
৬।
|
৭।
|
আগামী সেশনের প্রস্তুতি:
সেমিনারে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের জন্য আমরা কে কোন দলে কাজ করব এবং কোন দল কোন দেশ নিয়ে কাজ করব তা এখন আমরা জানি। আমাদের কাজ হলো দেশগুলো সম্পর্কে নিচের তথ্যগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসা। তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা চাইলে আমাদের পরিবারের সদস্যদের, আত্মীয়স্বজনদের এবং প্রতিবেশীদের সহায়তা নিতে পারি। পাশাপাশি ইন্টারনেট, টিভি সংবাদ, বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করেও আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। প্রয়োজনে আমরা তথ্য সংগ্রহে শিক্ষকের সহায়তাও নিতে পারব। বাড়ির কাজ হিসেবে আমরা প্রত্যেকে যে তথ্যগুলো নিয়ে আসব সেগুলো হলো-
গত সেশনে আমাদের 'আগামী সেশনের প্রস্তুতি' হিসেবে যে তথ্যগুলো নিয়ে আসার কথা ছিল সেগুলো নিয়ে এবার আমাদের কাজ করতে হবে।
শুরুতেই আমরা দলের সকল সদস্যের আনা সকল তথ্য একত্র করে এক জায়গায় লিখে ফেলতে পারি। এই তথ্যগুলো ব্যবহার করেই এবার আমাদের দলগত মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনটি তৈরি করতে হবে।
প্রেজেন্টেশন তৈরি জন্য আমরা আজ আমাদের বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবটি ব্যবহার করব।
আমাদের প্রেজেন্টেশনে থাকবে-
৯ম শ্রেণির অন্যান্য অভিজ্ঞতা থেকে আমরা গ্রাফ তৈরি, ইন্টারনেট থেকে ছবি নেওয়ার কৌশল এবং ভিডিও এডিটিং সম্পর্কে যা যা শিখেছি সেইসব জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের প্রেজেন্টেশনটি তৈরি করব।
প্রতিটি দলের একটি করে প্রেজেন্টেশন তৈরির মাধ্যমে আমাদের আজকের সেশনটি শেষ হবে।
আজ আমাদের সেমিনার এবং এই বছরের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শেষ সেশন।
গত সেশনে তৈরি করা মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনগুলো আজ আমরা আমাদের সেমিনারে উপস্থাপন করব। উপস্থাপনের ক্ষেত্রে দলের সকল সদস্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব এবং আমাদের প্রেজেন্টেশন দেখে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে সেসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
সেমিনার শেষে নিচের ছকটি পূরণ করে শিক্ষকের কাছে জমা দিব। এর উপর ভিত্তি করে শিক্ষক আমাদের প্রত্যেকের আন্তমহাদেশীয় বৈচিত্র্যপত্রে স্বাক্ষর করবেন।